রবি ঠাকুর তখন জগৎ খ্যাত। আজ থেকে প্রায় এক শতাব্দী আগে, ১৯২৪ সালের মে মাসে, পেরুর স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনে ঠাকুর একটি আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি ইউরোপের উদ্দেশ্যে কলম্বোতে হারুনা মারু জাহাজে চড়ে সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে রওনাও দিয়েছিলেন। ফ্রান্স থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় যাওয়ার সময় ঠাকুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন পরে জাহাজটি আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে পৌঁছোলে ডাক্তার রবিকে পেরুতে যেতে বাধা দেন। অগত্যা রবি, দেশে ফিরে এসেছিলেন তার পর। আর এই ফেরার পথেই, রিও ডি জেনিরোতে একদিনের জন্য থেকে গিয়েছিলেন রবি। সৃষ্টি হয়েছিল ব্রাজিলে রবীন্দ্র ইতিহাস।
সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে, কীভাবে ব্রাজিলের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঠাকুরের বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির চেতনা শিখিয়ে চলেছে আজও, তা জানলে অবাক হবেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল তথ্য কি জানেন! কলকাতা থেকে ১৫,০০০ কিমি দূরে ওই রিও ডি জেনিরো শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজও কবিকে গুরু মানে। ব্রাজিলের বিদেশী কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র আধ ঘন্টার পথের দূরত্বে, ১৯৬৩ এসকোলা মিউনিসিপাল টেগর (মিউনিসিপাল স্কুল ঠাকুর) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আপনি যদি ভাবছেন যে ঠাকুর ব্রাজিলে গিয়ে কেন স্কুল বানালেন! ইতিহাসটি বেশ আশ্চর্যজনক।
এস্কোলা মিউনিসিপ্যাল টেগোর (মিউনিসিপ্যাল স্কুল টেগোর) হল ব্রাজিলের রাজধানীতে এমনই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যা ঠাকুরের রিওতে প্রথম ভ্রমণকে স্মরণে রাখতে এবং তাঁর বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির নীতিকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ ঠাকুরের অনন্য দর্শনকে গ্রহণ করে, ইভেন্ট, প্রদর্শনী এবং ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোম এবং অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বৈষম্য ছাড়াই শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। তাদের নিজের ভাষায় ‘শিশুরা বাতাসে প্রজাপতির মতো। কেউ দ্রুত উড়ে, কেউ ধীরে ধীরে উড়ে। কিন্তু তারা যদি নিজেদের সেরা উপায়ে উড়ে চলার সুযোগ পায়, তাহলে দেখা যাবে যে প্রত্যেকেই আলাদা এবং প্রত্যেকেই বিশেষ।