how sheikh hasinas ouster may impact india bangladesh relation
how sheikh hasinas ouster may impact india bangladesh relation

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণার পরই ভারতেরও চোখ প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতির দিকেই। সোমবার দুপুরের পর থেকেই জল্পনা জোরালো হয়েছে। হাসিনার প্রস্থান নয়াদিল্লির জন্য এক বড়সড় দুঃসংবাদ। কিন্তু কেন?

২০০৯ সালে হাসিনা (Sheikh Hasina) ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশ (Bangladesh) ভারতের অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক সঙ্গী হয়ে ওঠে। ৭৬ বছরের আওয়ামি লিগ কন্যার ইস্তফার পর সেই জোটও কার্যত ভেঙে গেল। ‘ভারতবন্ধু’ হাসিনা বরাবরই এদেশের পাশে থেকেছেন। ফলে একদিকে ‘শত্রু’ পাকিস্তান হোক কিংবা নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো ‘কট্টর’ বন্ধুর মতো মোকাবিলা, ভারতকে বাংলাদেশকে নিয়ে আলাদা করে উদ্বিগ্ন হতে হয়নি। যা গুঞ্জন, হাসিনা এবার ব্রিটেনের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। এবার তাই নয়াদিল্লিকে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে হবে। কূটনৈতিক জোট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে কার্যত শূন্য থেকে। ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কাজটা সহজ হবে না।

আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দুই দেশের প্রতিরক্ষা। চিনের যাবতীয় প্রভাব সত্ত্বেও ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষার বিষয়টি বজায় রাখা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এবার তা নিয়ে সংশয়ের জন্ম হয়েছে। অথচ হাসিনার আমলে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও পরিস্থিতি মোটের উপরে শান্তিপূর্ণই ছিল। কেননা বাংলাদেশের মাটিকে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে দেননি। অসমের উলফা জঙ্গি গোষ্ঠী ঘাঁটি গাড়তে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করেছিল। সেই সময় হাসিনা সরকার শক্ত হাতে তা দমন করে। এবং শীর্ষ জঙ্গিনেতারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তাদের আটক করে ভারতের হাতেও তুলে দেয় বাংলাদেশ প্রশাসন।

এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের শরণার্থীর ঢল নামতে পারে। ত্রিপুরার টিপরা মোথার নেতা প্রদ্যোতকিশোর মাণিক্য দেববর্মা বলেছেন যে, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেছেন। এবং তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে কোনও অনুপ্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। বিএসএফ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। পাশাপাশি হাসিনার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশে জামাতের উত্থানের সঙ্গেও ভারতকে লড়াই করতে হবে। জামাতের শক্তিবৃদ্ধি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানের প্রত্যাবর্তনের দরজা খুলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কেবল পাকিস্তান নয়, আসরে নামতে পারে চিনও। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে বেজিং নিজেদের প্রভাব আরও বেশি করে বাড়াতে পারে বাংলাদেশের উপরে। অতীতে মায়ানমার, শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও যা তাদের করতে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে চিন, নেপাল, দূর পশ্চিমে তালিবান শাসিত আফগানিস্তান, ভারতবিরোধী মালদ্বীপের সঙ্গে এবার বাংলাদেশ- সীমান্তের চারপাশে বড়সড় অস্বস্তিতে পড়তে হবে ভারতকে।

এদিকে চিনের পরই এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। আবার উপমহাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে তাদের মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়তে পারে। ফলে সব মিলিয়ে হাসিনার ইস্তফার সঙ্গে সঙ্গেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে।