Is CPM embracing religion to regain public support?
Is CPM embracing religion to regain public support?

ধর্মকে আফিমের সঙ্গে তুলনা করে ভারতীয় সংস্কৃতি থেকেই একদা দূরে সরে গিয়েছিলেন। কালক্রমে জনবিচ্ছিন্নতাই নিয়তি হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের। শ্রমিক-কৃষক-সর্বহারাদের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তার শক্তি ক্ষয় হয়েছে। লাল নিশান হয়েছে ফিকে। আজকাল প্রতি নির্বাচনে ভোটবাক্সে খরা চেনা ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যর্থতার পাহাড় পেরনোর জন্য এবার রূপান্তরের পথ ধরল সিপিএম! রাজ্য সম্মেলনে শ্রীরামকৃষ্ণ, মন্দির, গির্জার ছবি প্রদর্শন অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। নিন্দুকদের খোঁচা, জনসমর্থন ফেরাতে নাস্তিকতা ছেড়ে এবার ধার্মিক হচ্ছে কমরেডকুল।

শনিবার থেকে ডানকুনির কোল কমপ্লেক্সের শান্তিমঞ্চে সিপিএমের ২৭ তম রাজ্য সম্মেলন শুরু হয়েছে। তার প্রথম দিনের ছবিটা কিছুটা ব্যতিক্রমই। সর্বহারা দলের সম্মেলনে এলাহি আয়োজন বিস্মিত করেছে অনেককেই। ৯টি কুলার বসানো বিশাল প্রেক্ষাগৃহের শীতল আবহাওয়া কি তাত্ত্বিক আলোচনার পক্ষে বেশ অনুকূল? জানা নেই। তবে বাঙালির প্রিয় মাছেভাতে রসনাতৃপ্তি নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের দিকনির্দেশে কিছুটা সহায়তা করবে। সম্মেলনে মূল গবেষণার বিষয়, ৩৪ বছরের রাজ্যপাট হারানোর পর কেন দলের সদস্য সংখ্যা এত কমতির দিকে? কেন আস্থা হারাচ্ছেন কমরেডরা? সেই আলোচনার আগে অবশ্য পক্ককেশ নেতাদের দেখা গেল, এবার আর ধর্মকে ততটা এড়িয়ে যাচ্ছেন না। নইলে কি আর সম্মেলন কক্ষের বহিরঙ্গ সেজে ওঠে হুগলির ঐতিহ্যবাহী মাহেশের রথযাত্রা, শ্রীরামকৃষ্ণ, তারকেশ্বর মন্দিরের ছবিতে?

মার্ক্স, লেনিনদের দলে চিরকাল শ্রদ্ধা জানানোর মুদ্রা শূন্যে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছোড়া। কিন্তু সোভিয়েত স্টাইল ছেড়ে এবার ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ফিরলেন খাঁটি ভারতীয় সংস্কৃতিতে। শহিদ মঞ্চে মাল্যদান করে তিনি করজোড়ে নমস্কার করলেন। এমন দৃশ্য কমিউনিস্ট পার্টিতে দুর্লভ। বছর দশেক আগে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষের প্রয়াণের সময়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখা গিয়েছিল ওই ভঙ্গিতে। একদা সতীর্থকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে স্যালুটের পর তিনি নমস্কারও করেছিলেন। এমন প্রথা ভাঙা আচরণ নিয়ে কথাও কম হয়নি তখন। তবে এখন তো সেই দিনকাল নেই। সময়ের দাবি মেনে রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে চলেছে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি। তারই একটা টুকরো অংশ বোধহয় নমস্কার!

কিন্তু কেন সিপিএমের এই মেটামরফোসিস? অনেকের মতে, এটা আসলে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। গেরুয়া শিবিরের ‘হিন্দুত্ববাদী’ পরিচয় বরাবরের। ইদানিং তৃণমূলও খানিকটা ধর্মীয় বার্তা দিচ্ছে। এসব ঠেকাতেই কি অবশেষে লাল পার্টি ধর্মের শরণ নিল? ভারতের মতো আধ্যাত্মিক ভূমিতে জনগণের দৈনন্দিন জীবনে যে সূক্ষ্ম ধর্মীয় ভাব ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তা সম্পূর্ণত উপেক্ষা করার পরিণাম কী হয়, তা বুঝেই সম্ভবত এমন রূপান্তর। এদেশে ধর্ম আফিম নয়, নয় অযথা সংস্কারও। ধর্ম এদেশে আমজনতার জীবনযাপনের অংশ মাত্র। সংগ্রামী নেতারা হয়ত তা বুঝছেন।