শহরের বুকে চোখ ধাঁধানো ঘটনা। এটিএম কার্ড দিয়ে রাজ্যে নতুন করে প্রতারণার ছক তৈরি করেছে একটি চক্র। বুধবার আগরতলা শহরের এক ট্রেভেল এজেন্সির মধ্যে গিয়ে প্রতারণা করতেই সামনে উঠে আসে গোটা প্রতারণার ছক। এই ঘটনায় পূর্ব আগরতলা থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে পাঁচ যুবক। ঘটনার বিবরনের জানা যায়, বুধবার রাজধানীর মঠ চৌমুহনী এলাকার এক ট্রেভেল এজেন্সির মধ্যে গিয়ে জম্বু কাশ্মীর যাওয়ার জন্য টিকিট ক্রয় করতে যায় এক প্রতারক। যথারীতি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক সৌমিত্র কুমার বণিক টিকিট কেটে দেয়। অভিযুক্ত প্রতারক টিকিটের দাম ১০ হাজার টাকা অনলাইনে দেয়।
তারপর কিছুক্ষণ পর সেই প্রতারক আবার ক্রেতা সেজে এজেন্সির মধ্যে গিয়ে দাবি করেন তার টিকিট বাতিল করে ১০ হাজার টাকা একাউন্টে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য। সেই অনুযায়ী এজেন্সির মালিক সৌমিত্র কুমার বণিক টাকা ফেরত দিয়ে দেয় একাউন্টে। কিছুক্ষণ পর তামিলনাড়ুর পুলিশ সুমিত্র কুমার বণিককে ফোন করে জানিয়ে দেন তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে বেআইনি টাকা লেনদেন হয়েছে। সুমিত্র কুমার বণিকের অ্যাকাউন্ট শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে সুমিত্র বণিক ফোন রেখে পূর্ব আগরতলা থানায় ছুটে আসেন। পুলিশকে গোটা ঘটনা খুলে বলেন। পুলিশ সাথে সাথেই ঘটনার তদন্তে নেমে ক্রেতা সেজে টিকিট ক্রয় করতে যাওয়া প্রতারককে ধরে থানায় নিয়ে আসে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে তারা একটি টিম রাজ্যে প্রতারণা জাল ফেলেছে। তারা কালো টাকা সাদা করতে বিভিন্ন মানুষের সাথে এভাবে প্রতারণা করে চলেছে। প্রথম অবস্থায় মানুষের কাছে তারা অনলাইনে টাকা পেমেন্ট করে, পরবর্তী সময় যখন সেই ব্যক্তির কাছ থেকে আবার অনলাইনে টাকা নিয়ে কালো টাকা সাদা করে। সাধারণ মানুষকে এটিএম কার্ড অধিক হারে খুলে এটিএম কার্ড ভাড়া দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। কার্ড পিছু প্রতিমাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে দেয় মানুষকে। তারপর তারা এই এটিএম কার্ড কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল পন্থায় প্রতারণার ঘটনা সংঘটিত করে চলেছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে প্রচুর এটিএম কার্ড, ব্যাংকের পাসবুক এবং নগদ অর্থ আটক করেছে। পুলিশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে প্রত্যেকটি এটিএম কার্ডের মধ্যে গত ছয় মাসে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। রাজ্যে তাদের একটা বড় চক্র নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে চলেছে। পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের নাম পীযূষ দেবনাথ, বাড়ি বোধজং নগর এলাকায়, নারায়ন দেবনাথ, বাড়ি এয়ারপোর্ট এলাকায়, সাগর দাস, বাড়ি আড়ালিয়ায়, রিপ্তাদীপ বিশ্বাস, বাড়ি নতুন পল্লী এলাকায়, রোহন রুদ্র পাল, বাড়ি হাউজিং বোর্ড এলাকায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে শুধু তাদের এই নেটওয়ার্ক রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রাজ্যের বাইরেও এই নেটওয়ার্ক রয়েছে। পুলিশ তদন্তে এগিয়ে যেতে তাদের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা যায়।