শাসক দলের অনুষ্ঠানে গিয়েও দোকান বাঁচাতে পারলেন না লেক চৌমুহনি বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে চলে বাজারে বুলডোজার। জানা যায়, আগরতলা পুর নিগম থেকে আগরতলা শহরের প্রতিটি বাজারকে অধুনিক মানের বাজারে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক লেইক চৌমুহনী বাজারটিকেও উন্নত মানের বাজারে পরিণত করা হবে। তার জন্য বেশ কয়েক দফা বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন মেয়র দীপক মজুমদার।

বাজারের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। বিশেষ করে লেইক চৌমুহনী বাজারে পিছনের দিকে বাধের পাড়ে যে সকল ব্যবসায়ী অবৈধ ভাবে অস্থায়ী ও স্থায়ী ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছিলেন, তাদেরকে তাদের দোকানপাট ভেঙ্গে ফেলার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারপরও তারা তাদের দোকানপাট ভাংছিলেন না। অবশেষে বৃহস্পতিবার ভোরে পুর নিগম থেকে এই সকল দোকানপাট ভেঙ্গে ফেলা হয় ড্রজার দিয়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান তাদেরকে ব্যবসা করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। কারন খোলা আকাশের নিচে বসে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। দীর্ঘ বছর ধরে তারা লেইক চৌমুহনী বাজারে ব্যবসা করে আসছেন। কোন সরকারের সময় তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয় নি। বর্তমানে ওনারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন।উচ্ছেদ অভিযান শেষে সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিদর্শনে যান মেয়র দীপক মজুমদার।

তিনি কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাথে। পরে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মেয়র দীপক মজুমদার বলেন আগরতলা শহরের প্রতিটি বাজারকে উন্নত বাজারে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক লেইক চৌমুহনী বাজারকেও উন্নত বাজারে পরিণত করা হবে। লেইক চৌমুহনী বাজারকে নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ ছিল। ইতিপূর্বে বাজার কমিটির সাথে কথা বলা হয়েছে। দুইবার সার্ভে করে দেখা গেছে শতাধিক দোকান রয়েছে যেগুলি অবৈধ ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এইদিন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সেই সকল দোকান গুলিকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদেরকে পরবর্তী সময় ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। এইদিকে উচ্ছেদ অভিযানের পর লেইক চৌমুহনী বাজার পরিদর্শনে যান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের নেতৃত্বে সিপিআইএম-এর এক প্রতিনিধি দল। মানিক সরকার কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাথে। সবকিছু জানার পর মানিক সরকার জানান যে ভাবে উচ্ছেদ অভিযান করা হয়েছে এইটা অমানবিক। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত গরীব। পুর নিগমের উচিত ছিল আগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা। আগরতলা শহরের বিভিন্ন বাজার গুলিতে একের পর এক উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময় লেইক চৌমুহনী বাজারকে নিয়ে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। যদিও তা করা সম্ভব হয় নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলি বর্তমানে কোথায় যাবে। এই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মানিক সরকার।

পুর নিগমের বাজারের উন্নয়নের জন্য অবৈধ নির্মাণ ভেঙ্গে দিয়েছে তা ঠিক। কিন্তু এই অবৈধ ঘরকে ব্যবহার করে বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংসার চলে। বর্তমানে এই পরিবার গুলি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সেই দিক থেকে বিচার করলে এই উচ্ছেদ অভিযান অমানবিক। পুর নিগম যদি এই সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ অভিযান চালাতো তাহলে হয়তো এই পরিবার গুলি নিঃস্ব হতো না। এখন দেখার পুর নিগম ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে মানবিক দৃষ্টি কোন থেকে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কিনা।