আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে আজ মে, ২০২৫) ত্রিপুরা সরকারের তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তরের (ডিআইটি) উদ্যোগে, কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ জাতীয় ই-গভর্নেন্স ডিভিশনের (এন.ই.জি.ডি.) সহযোগিতায়, “সুশাসনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও প্রভাব বৃদ্ধি” শীর্ষক এক সচেতনতামূলক ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মশালার সফল আয়োজন হয়।
ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যসচিব শ্রী জিতেন্দ্র কুমার সিনহা’র (আইএএস) পৌরহিত্যে আয়োজিত এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্রী কিরণ গিত্তে (আইএএস) এবং তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অধিকর্তা শ্রী জেয়া রাঘুল গেশান বি. (আইএফএস)। সঙ্গে এন.ই.জি.ডি., রাজ্য ই-গভর্নেন্স মিশন টিম (এস.ই.এম.টি.), ইন্ডিয়া এআই মিশন এবং রাজ্য সরকারের অন্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণে তথ্য-প্রযুক্তি সচিব শ্রী কিরণ গিত্তে (আইএএস), প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) রূপান্তরকারী সম্ভাবনায় গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আর ভবিষ্যতের কোনো ধারণা নয়, বরং বর্তমান সময়েই তা তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সক্রিয় পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনগত দক্ষতার এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে এআই’র সমন্বয় প্রশাসনিকভাবে সাড়া বা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে, ম্যানুয়াল বা মানবীয় হস্তক্ষেপ কমাতে পারে এবং তাৎক্ষণিক উপলব্ধি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অগ্রিম নীতিনির্ধারণকে সম্ভব করে তুলবে। তিনি আরও একবার রাজ্য সরকারের এআই-ভিত্তিক উদ্ভাবনী পরিবেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, যার মাধ্যমে নাগরিকদের আরও ভালো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
বিশেষ ভাষণ প্রদানকালে মুখ্য-অতিথি মুখ্যসচিব শ্রী জিতেন্দ্ৰ কুমার সিনহা (আইএএস) প্রথমেই রাজ্যের ডিজিটাল প্রশাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন, যেখানে তিনি ‘ই-অফিস’ ‘ই-ক্যাবিনেট’ এবং সুবিধাভোগী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ( বেনিফিসিয়ারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) মতো প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগগুলো শুধু প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে সহজতর করেনি, বরং স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা বাড়িয়েছে, যা ডিজিটাল ত্রিপুরা ও ডিজিটাল ইন্ডিয়ার বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। মুখ্যসচিব আধুনিক জন-প্রশাসনকে আরও উন্নত করতে উদীয়মান প্রযুক্তিগুলো গ্রহণের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্ৰশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতাকে শক্তিশালী করতে পারে, সরকারি কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতে পারে এবং পরিষেবা প্রদানের সামগ্রিক গুণমানকে উন্নত করতে পারে। তিনি শাসন ব্যবস্থার সকল স্তরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ও দায়িত্বশীল প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতিগত প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
প্রধান কারিগরি অধিবেশন :
এই কর্মশালায় মোট চারটি কারিগরি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, পরিচালনা করেন এন.ই.জি.ডি.
যেগুলো এ.আই.
(NeGD) এবং ইন্ডিয়া ( IndiaAI) দলের বিশেষজ্ঞরা। নিম্নলিখিত বিষয়বস্তু নিয়ে আয়োজিত হয় এই অধিবেশন :
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিংয়ের (ML) ভিত্তি এবং এগুলোর ঝুঁকি প্রশমনের কৌশল :
ইউনিটের
এন.ই.জি.ডি.’ র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি (টি.এ.ইউ.)-এর এক জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা (সিনিয়র কনসালটেন্ট) কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের মূল ধারণা, বিভিন্ন লার্নিং মডেল (সুপারভাইজড, আনসুপারভাইজড, রিইনফোর্সমেন্ট) এবং ঝুঁকি প্রশমনের কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন৷ ২. উন্নত প্রশাসনের জন্য এআই-এর প্রয়োগ :
এন.ই.জি.ডি.’ র
রাজ্য ই-গভার্ন্যান্স মিশন টিমের (এস.ই.এম.টি.) প্রধান এই অধিবেশনটি পরিচালনা করেন। তিনি এআই’র সফল বাস্তবায়নের কিছু কেস-স্টাডি তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট নজরদারি ব্যবস্থা, এআই-চালিত চ্যাটবট এবং টি.-অ্যাপ ফোলিও প্ল্যাটফর্ম।
৩. আরও বুদ্ধিদীপ্ত জন-প্রশাসনের জন্য এআই টুলস:
টি.এ.ইউ.’র এক জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা (সিনিয়র কনসালটেন্ট) এই অধিবেশনটি পরিচালনা করেন। কীভাবে ধারণাপত্র তৈরি করা (ড্রাফটিং কনসেপ্ট নোটস), প্রতিবেদন লেখা (জেনারেটিং রিপোর্টস), বৈঠকের সারসংক্ষেপ তৈরি (সামারাইজিং মিটিংস) এবং প্রশাসনিক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করার ক্ষেত্রে (অটোমেটিং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টাস্কস) এআই টুল ব্যবহার করা যায়—এগুলো নিয়ে তিনি আলোচনা
করেন।
৪. শক্তিশালী এআই পরিকাঠামো নির্মাণ :
ইন্ডিয়া এ.আই. দলের প্রতিনিধিরা কর্মশালার সমাপ্তি অধিবেশনটি পরিচালনা করেন। এতে তাঁরা ক্লাউড এবং অন-প্রেমাইস পরিকাঠামোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ, এআই কম্পিউটিং চাহিদা (জিপিইউ/টিপিইউ), এবং ইন্ডিয়া এ. আই. ডাটাসেটস প্ল্যাটফর্ম-এর পরিচিতি উপস্থাপন করেন।
কারিগরি অধিবেশনগুলোর পর অনুষ্ঠিত হয় একটি অংশগ্রহণভিত্তিক প্রশ্নোত্তর ও প্রতিক্রিয়া পর্ব, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পান। কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অধিকর্তা শ্রী জেয়া রাঘুল গেশান বি. (আইএফএস) -এর আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ
জ্ঞাপনের মাধ্যমে।
এই উদ্যোগ ত্রিপুরার ডিজিটাল প্রশাসনের রূপরেখায় এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে চিহ্নিত করে। কর্মশালাটি শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি, বরং বিভিন্ন বিভাগের প্রয়োজন অনুসারে এআই-ভিত্তিক পরীক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণের পথকেও উন্মুক্ত করেছে। উদীয়মান প্রযুক্তি কীভাবে কার্যদক্ষতা বাড়ায়, স্বচ্ছতা আনে এবং জনসেবার মান উন্নত করে, কর্মশালাটি সে সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের আরও গভীর ও বাস্তবসম্মত উপলব্ধি দিয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তর ডিজিটাল উদ্ভাবনে অটল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে দক্ষ ও ভবিষ্যতের চাহিদা অনুযায়ী সরকারি কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগিয়ে জনকল্যাণমূলক, জবাবদিহি ও নাগরিক-কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে চলছে।