গল্পকার নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় এর ছোট গল্প নক্র চরিত্র অবলম্বনে নাট্যকার উত্তম দাস ‘’বুমেরাং’’ নাটকটি লিখেছেন

Uttam Das wrote 'BOOMRANG" drama
Uttam Das wrote 'BOOMRANG" drama

‘’কর্ম অনুযায়ি পরিনতি লিখিত হয়’’ রাঙ্গামাটি নাট্যক্ষেত্রের প্রযোজনা ‘’বুমেরাং’’ এই মর্মার্থটিকেই তুলে ধরেছে । বিখ্যাত গল্পকার নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় এর ছোট গল্প নক্র চরিত্র অবলম্বনে নাট্যকার উত্তম দাস ‘’বুমেরাং’’ নাটকটি লিখেছেন, যার নির্দেশনায়ও ছিলেন তিনি । সম্মিলিত নাট্যপ্রয়াসের উদ্যোগে রাঙ্গামাটির নাট্যক্ষেত্র ২৩শে অগাস্ট, ২০২৫, শনিবার আগরতলার মুক্তধারা প্রেক্ষাগৃহে এই প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ করে । একজন অর্থ লোভী মানুষ নিশিকান্ত, তার ক্ষমতার জোড়ে ৩টি ডাকাতকে লালন পালন করে চলেছে, তারা মানুষকে লুট করে, লুট করা জিনিস নিশিকান্তের কাছে জমা করে, তার বদলে নিশিকান্ত তাদের অর্থ দেয় । দারোগা ইব্রাহিমকে ঘুশ খাইয়ে নিশি তার এই কুকূর্ম চালিয়ে যায় । নিশিকান্তের স্ত্রী জিবিত নেই, একজন অল্পবয়স্ক মহিলা বিশাখাকে সে বৈষ্ণবী সাজিয়ে নিজের কাছে রেখেছে । দয়ামায়াহীন নিষ্ঠুর নিশিকান্ত একমাত্র তার কন্যা ময়নাকেই ভালোবাসে, বাকি সকলের সাথে তার স্বার্থের সম্পর্ক । ডাকাতরা ধীরে ধীরে হিংস্র হয়ে উঠে, মানুষ মারা তাদের নেশায় পরিনত হয় । তব এইখানেও নাট্যকার একজন ডাকাতকে অন্যভাবে দেখিয়েছেন । যোগী নামে সেই ডাকাত বাকি ডাকাতের মত নয়, এই কাজে সে এখনো অভস্থ্য হয়ে উঠতে পারেনি। হিংস্রতা তাকে কষ্ট দেয় । সে বাচ্চাদের চিৎকার, মহিলার আর্তনাদ, ঝি ঝি পোকার শব্দ এমন অনেক শব্দ শুনতে পায়, যেখানে সে বুঝতে পারে এই কর্মের ফল ভালো হবে না । এই ইঙ্গিত সে নিশিকান্তকেও দিয়েছে, কিন্তু মূর্খ নিশিকান্ত তার ভাবাবেগ বুঝতে পারে নি । এক সময় এই ডাকাতির ঘটনা যখন বৃদ্ধি পায় তখন সকলের মধ্যে ভিতির সঞ্চার হয় । নিশিকান্ত ডাকাতদের বলে এই গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে । সেই সাথে নিশির মেয়ে ময়নাও বিয়ের আগে নিশিন্তপুর দাদু বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরে । নিশি রাজি হয় । সবশেষে দেখা যায় ডাকাতরা গ্রাম ছেড়ে দিলেও ডাকাতি করা ছাড়তে পারে নি । তারাও নিশিন্ত পুরে আস্তানা করে এবং সেখানেও লুট হত্যা চালায়, যেখানে একরাতে নিশির নিজের মেয়ের হাত কেটে নিশিকে উপহার দেয় । এইখানেই কর্মের ফল পায় নিশি ।
এই নাটকের প্রধান চরিত্র নিশিকান্তের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌরজিত গোপ । যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এই খল চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য এবং অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি, আগামিতে আরো ফুটে উঠবে উনার চরিত্র এই আশা শতভাগ রাখা যায় । বিশাখা চরিত্রে রিমি দেব যথাযথ কাজ করেছেন । ময়না চরিত্রে সায়নিকা সুত্রধর খুব ভালো কাজ করেছে । দারোগা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাট্যকার ও নির্দেশক উত্তম দাস । ঘুশখোর দারোগা পরবর্তীতে নিজেও অসহায় হয়ে পড়ে নিশির নিষ্ঠুরতা দেখে । এই চরিত্রটি যথাযথ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি ।
ডাকাত দের মধ্যে মদন ডাকাতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পংকজ ভৌমিক, নিতাই ডাকাতের ভুমিকায় ছিলেন সাগর দেবনাথ এবং যোগী ডাকাতের ভুমিকায় ছিলেন বুদ্ধদেব সাহা । প্রত্যেককেই খুব মানিয়েছে । তবে মদন ডাকাতের ভুমিকায় পঙ্কজকে তার উচ্চারণ স্পষ্টতার উপর অল্প পরিমাণে নজর দিতে হবে । এই নাটকের আলো করেছে সঞ্জয় দাস । আবহ দিয়েছেন রিমি দেব এবং রূপ সজ্জায় ছিলেন পীযুষ কান্তি রায়, মঞ্চ করেছে পঙ্কজ ভৌমিক এবং রাজেশ কান্তি সাহা,সাউন্ড দিয়েছেন শিশির কর । প্রত্যেকে নিজেদের কাজ নাট্য অনুসারি করেছেন । ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই নাটক আমাদের এইটাই শিক্ষা দেয় কর্ম ফল থেকে কেউ ছাড় পাবে না । এই নাটক টি আগামী দিনে আরো ভিবিন্ন জায়গায় হোক, যাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয় ।