সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, খুব সম্ভবত ২১ কিংবা ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্য সফরে আসবেন এবং তিনি উদয়পুরের নব নির্মিত মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের উদ্বোধন করবেন। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। রবিবার ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা গোটা মন্দির চত্বরে বিশেষ পরিদর্শন, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা খতিয়ে দেখলেন।
প্রসঙ্গত আসন্ন প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যের মতোই ত্রিপুরার গর্ব মাতাবাড়ি সতী পীঠ-এ চলছে জোরকদমে প্রস্তুতি। রাজ্যের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই তীর্থস্থানকে ঘিরে ভক্ত ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন উৎসাহ, তেমনই প্রশাসনিক স্তরে তৈরি হচ্ছে কড়া নিরাপত্তা বলয়। এই প্রেক্ষাপটেই রবিবার সকালে সতী পীঠে বিশেষ পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী, মাতাবাড়ি কেন্দ্রের বিধায়কসহ জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই মন্দিরে প্রবেশ করে মাতা ত্রিপুরা সুন্দরীর মন্দির কমিটি ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে মন্দির এলাকায় বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ভক্ত ও সাধারণ দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বিশেষ প্রবেশ ও প্রস্থান পথ নির্ধারণ করা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়ানো হয়েছে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা। পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যায়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন “ত্রিপুরার গর্ব এই মাতাবাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মা ত্রিপুরা সুন্দরীর আশীর্বাদে রাজ্যের উন্নয়ন আরও গতি পাবে। মন্দিরকে ঘিরে পর্যটন এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটলে সাধারণ মানুষও উপকৃত হবেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সবকিছু সরজমিনে দেখেছেন তিনি। মাতাবাড়ির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে কথা বলবেন। তারপর দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রক জানিয়ে দেবেন আগামী কত তারিখ প্রধানমন্ত্রী হাত ধরে উদ্বোধন হবে নবরূপে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ৫১ পীঠের অন্যতম পীঠস্থান মাতা ত্রিপুরা সুন্দরী মায়ের মন্দিরকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসাদ প্রকল্পের আওতায় এনে মন্দিরকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে কাজ প্রায় শেষ। মায়ের মন্দিরের উপরের সবটা অংশ নতুন ভাবে সাজানো হয়েছে। নিচে ব্যবসায়ীদের জন্য দোকান করার জন্য নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলার কাজ সেজে উঠেছে। মন্দির ও মন্দিরের বাহিরে নতুন ভাবে রঙের কাজ প্রায় শেষের পথে নতুন করে আলোকে সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। অর্থাৎ মায়ের মন্দির নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলার কাজ প্রায় শেষের পথে। খুব সম্ভবত চলতি মাসেই উদ্বোধন হতে পারে নবরূপে মায়ের মন্দির। অর্থমন্ত্রী জানান, মাতা বাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পকে আরও বেগবান করার জন্য ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। তাঁর কথায় “মাতাবাড়িকে ঘিরে পর্যটন উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। হাজার হাজার মানুষের জীবিকা এখানে জড়িত। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।”
এদিন মাতা বাড়ি কেন্দ্রের বিধায়কও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান “আমাদের এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। মাতাবাড়িকে কেন্দ্র করে আমাদের অঞ্চলের উন্নয়নের পথ আরও প্রসারিত হবে। আমরা মন্দির কমিটি ও প্রশাসনের সঙ্গে থেকে প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করব।” মুখ্যমন্ত্রীর আকস্মিক সফরে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে মাতাবাড়ির গুরুত্ব সারা দেশে নতুন মাত্রা পাবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলও আশাবাদী যে, এর ফলে পরাটকদের আগমন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।


