নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপাল সিং, ত্রিপুরা
পূজোর এক সপ্তাহ আগেই লালছড়ার প্রসিদ্ধ মৃৎশিল্পীর বাড়িতে দুর্গা প্রতিমা ভাঙার ঘটনা ঘটায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। একি প্রচারে আসার টেকনিক! নাকি পারিবারিক কলহের জের! প্রকৃত ঘটনা জানতে জনমনে কৌতূহল বিরাজ করছে। জনগণের প্রশ্ন, যদি কেউ মুর্তি ভাঙতেই আসতো তবে কি মুর্তির পেছন থেকে ধারালো কিছু দিয়ে একটি মুর্তিই ভাঙতো? এছাড়া কিভাবে রামকৃষ্ণ আশ্রমের মুর্তিটিই কায়দা করে শুধুমাত্র হাতটাই ভেঙে চলে গেল? যা কিনা সহজেই জোড়া লাগানো যেতে পারে বলে কতিপয় মৃৎশিল্পীদের অভিমত। তাছাড়া ভাঙা মুর্তিতে নাকি নেই তেমন কোনো ফাটল!
স্থানীয়রা জানায়, পল্লব পালের কর্মশালার একটি প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে; খবর ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও মিডিয়া আচমকাই ঘটনাস্থলে আসে এবং তদন্ত শুরু করে। এর আগে প্রতিবেশীরাও মুর্তি ভাঙার বিষয়ে কিছু জানতো না। মিডিয়া আর পুলিশের আসার পড়েই সবাই জানতে পারে এমন কিছু ঘটেছে। জানা যায়, মৃৎশিল্পের এই কাজে পাল বাড়ীর সুনাম আছে। লালছড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে, প্রায় তিন পুরুষ কাজ করে চলছে। প্রতিবেশী ও কয়েকজন স্থানীয় কারিগর জানান, ওই এলাকায় বর্তমানে ৪-৫ জন পেশাদার মৃৎশিল্পী নিয়মিত কাজ করেন; তাদের পরিবার ৬০–৭০ বছর ধরে এই কাজে নিযুক্ত। এ পর্যন্ত এমন কোনো ঘটনার নজির ছিল না। পল্লব পালের কর্মশালার ভিতরে কীভাবে এবং কেন প্রতিমা ভাঙা হলো, তা নিয়ে এলাকায় নানা ধরনের গুঞ্জন ও অনুমান চলছে। কেউ কেউ বলছেন তা পারিবারিক কলহ বা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে থাকা ভুল বোঝাবুঝির ফল, আবার কারো দাবি এটি প্রচারের উদ্দেশ্যেই ঘটানো হতে পারে — তবে এ সবই আপাতত অনুমান মাত্র।
এসব প্রশ্নের মধ্যেই পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালেই ঘটনাস্থলে পুলিশি টিম তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, এবং প্রতিবেশীদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে, ‘ভাগ্যিস অন্য জাতি আশেপাশে নেই! নয়তো জাতিগত দাঙ্গাই বেধে যেত!’ কিন্তু কিভাবে সাধারণত মাটির প্রতিমা কাটার বা ভাঙার ক্ষেত্রে ধারালো হাতিয়ার ব্যবহার করে এমনভাবে পেছন থেকে নিপুনভাবে কাজটি করা যায়, তা হয়তো প্রাকৃতিকভাবে ভেঙে যাওয়ার মতো না দেখায়—অনেক বুদ্ধি খরচ করে করা হয়েছে বলেও স্থানীয় জনগণ মনে করছেন। প্রকাশিত ছবিও এমনটাই ইঙ্গিত করছে বলে অভিমত জনগণের।
তবে স্থানীয় সামাজিক ও ধর্মীয় নেতারা অনিচ্ছাকৃত উত্তেজনা এড়াতে জনগণকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন। তারা সংবাদ দ্রুত ভাইরাল হলে ভুল তথ্য সমাজে বিভাজন তৈরি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং প্রশাসনের কাছে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি তুলেছেন। এলাকার সাধারণ মানুষও সঠিক তথ্য জানার প্রত্যাশা করছেন, যাতে গুজব থেকে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।