আগরতলা, ৪ অক্টোবর: কোন ধরণের ঘটনা ছাড়া এবছর দুর্গাপুজো শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রাজ্যে শিল্প সংস্কৃতি, সাহিত্যের বিকাশ ও চর্চা আরো বেশি করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এবারের পুজোয় জনজাতিদের মধ্যেও ব্যাপক উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়েছে।
আজ আগরতলার মহারাণী তুলসীবতি গার্লস স্কুলের সামনে আয়োজিত ‘মায়ের গমন ২০২৫’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে শুভ বিজয়া ও দশেরার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, এধরণের কার্নিভাল চার বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে। শুরু থেকে প্রথম দুবছর সিটি সেন্টারের সামনে আয়োজন করা হয়। এরপর গত বছর থেকে সবার সাথে আলোচনা ক্রমে তুলসীবতি স্কুলের সামনে করা হচ্ছে। এই আয়োজনের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে – নান্দনিক, দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খলভাবে পুজোর আয়োজন সম্পন্ন করা। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের বার্ষিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে এটাকে অন্যতম বৃহৎ কার্যক্রম হিসেবে নেওয়া হয়েছে। আজ এখানে জাতি জনজাতি অংশের ছেলেমেয়েরা মিলিতভাবে সুন্দর সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিবেশন করেছে। এতে আমাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা আরো সমৃদ্ধ হবে। আমাদের সরকারও সেই দিশায় কাজ করছে। এধরণের আয়োজনের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা আরো সুদৃঢ় হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর ১৪ অক্টোবর এই জায়গায় আমরা মায়ের গমন এর আয়োজন করেছি। আমি তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি যে রাজন্য আমলে এখান থেকেই শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হতো। এরপর ক্লাব, সংস্থা, পুজো উদ্যোক্তা সহ সকলেই এই জায়গা নির্ধারণ করা নিয়ে তাদের সহমত ব্যক্ত করেন। তাই পুরনো ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে এই জায়গা থেকে মায়ের গমন এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এই শুভ বিজয়া কিংবা দশেরা শুধু হিন্দু ধর্মের মধ্যে সীমিত নেই, সারা বিশ্বে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ও সমাদৃত হচ্ছে। এটা দুর্গাপুজো বা মায়ের গমন যাই হোক না কেন, রাজ্য সরকার চাইছে শিল্প সংস্কৃতি, সাহিত্যের বিকাশ ও তার চর্চা আরো বেশি করে ত্রিপুরায় হোক। সেটাকে মাথায় রেখে এধরণের পরিমন্ডল শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারও পুজো উপলক্ষে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় জাতি জনজাতি আয়োজিত পুজোয় অংশ নিয়েছি। জনজাতি এলাকাতেও বহু বছর ধরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। দুর্গাপুজোকে ঘিরে জনজাতিদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা প্রতীয়মান হয়। যেটা আগে প্রত্যক্ষ করা যেত না। এতে আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার বিকাশ হচ্ছে। গত বছরের মতো এবছরও কোন ঘটনা ছাড়া দুর্গাপুজো শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মী এবং সমস্ত ক্লাব, সামাজিক সংস্থা সহ যারা পুজো আয়োজন করেছেন আমি তাদের সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। সেই সঙ্গে আগরতলা পুর নিগমের পুরো টিমকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, অর্থমন্ত্রী প্রনজিত সিংহ রায়, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী কিশোর বর্মন, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, পশ্চিম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিত শীল, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, আধিকারিক ও সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকগণ। মায়ের গমনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উল্লেখ্য, তুলসীবতি স্কুল চত্বর হয়ে জ্যাকসন গেইট, কামান চৌমুহনী, পোস্ট অফিস চৌমুহনী, সিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে বটতলা দশমীঘাটে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এজন্য কঠোর করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।