নিজস্ব সংবাদদাতা, গোপাল সিং, ত্রিপুরা
সংস্কৃতির শহর খোয়াই—যেন এক চিরন্তন ধ্রুবতারা, যে আলোয় বারবার উদ্ভাসিত হয়েছে ত্রিপুরার সাহিত্য আকাশ। এখানে কবিতা শুধু লেখা হয় না, জন্ম নেয় নব নব স্রোতধারা। সেই ধারা বহমান রেখেই খোয়াইয়ের স্বনামধন্য কবি দীপেন নাথশর্মার একাদশতম প্রয়াস, সাহিত্য পত্রিকা ‘আজকের ভাষা’-এর শারদ সংখ্যা উন্মোচিত হলো এক অনন্য আয়োজনে।
সম্পাদক দীপেন নাথশর্মা’র বাসভবনেই কবি ও গুণিজনের মিলনমেলায় যখন পত্রিকার আবরণ উন্মোচনে যেন সৃজনশীলতার এক নতুন পুষ্পমাল্য চিরায়ত আঙিনায় অর্পিত হলো। আবরণ উন্মোচন করেন রাজ্যের প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোপাল সিং এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্যা গীতা নাথশর্মা। তিনি আবার সম্পর্কে সম্পাদক দীপেন নাথশর্মা’র মা। তাদের হাতে যখন উন্মোচিত হলো ‘আজকের ভাষা’-এর শারদ সংখ্যা, তখন যেন সাহিত্যলোকে এক নীরব প্রার্থনা ধ্বনিত হলো— বাংলা ভাষা চিরজীবী হোক, খোয়াইয়ের কবিরা চিরসঞ্জীবনী শক্তি পান।
অনুষ্ঠানে গুণিজনদের মধ্যে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কবি প্রিয়তোষ ঘোষ, কবি প্রণব চৌধুরী, কবি সুব্রত আচার্য্য, কবি সুমিতা রায়, কবি সুদীপ পাল, কবি গৌতম অধিকারী, কবি সুব্রত দেব, নবীন কবি দীপ্যমান নাথশর্মা ও সৌরপ্রতিম শর্মা প্রমুখ। গুণিজনরা এদিন তাদের আলোচনায় খোয়াইয়ের সাহিত্য ঐতিহ্যের গৌরবগাথা স্মরণ করালেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের সংবর্ধনা জানানো হয়। এরপর গুণিজনের আলোচনা যেন পরিণত হলো চিন্তন ও চেতনার উর্বর মাটিতে। একে একে সবাই সমাজের প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে কলমকে আরও ধারালো করার আহ্বান জানান। তারা বলেন—লেখক সমাজের দর্পণ, কবিরা জনমানসের কণ্ঠস্বর। তাই প্রতিটি শব্দ যেন দায়বদ্ধতার অস্ত্র হয়ে ওঠে।
সম্পাদক দীপেন নাথশর্মা নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “আজকের ভাষা শুধু আমার নয়, এটি আমাদের সকলের মিলিত কণ্ঠস্বর। খোয়াইয়ের মাটিতে সাহিত্য যেন নদীর মতো প্রবাহিত হয়—কখনও মৃদু, কখনও উত্তাল, কিন্তু সর্বদা জীবন্ত। আমাদের স্বপ্ন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আগামী প্রজন্মের হাতে নতুন আলোয় তুলে দেওয়া।”
বিশিষ্ট সাংবাদিক গোপাল সিং এই উদ্যোগের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘আজকের ভাষা’ শুধু একটি পত্রিকা নয়, এটি খোয়াই তথা ত্রিপুরার সাহিত্য আন্দোলনের সেতুবন্ধন। তিনি কবি ও সাহিত্যিকদের মিলেমিশে আগামী দিনেও এই ঐকান্তিক প্রয়াস জারি রাখার আহ্বান জানান। তার কণ্ঠে শোনা গেল দৃঢ় বিশ্বাস— সাহিত্যই সমাজকে জাগ্রত করবে, নবযুগের বীজ বপন করবে।
কবি প্রিয়তোষ ঘোষ তার বক্তব্যে খোয়াইয়ের সাহিত্যিক ঐতিহ্যের এক দীর্ঘ ইতিকথা তুলে ধরেন। তিনি নবীন কবিদের উৎসাহিত করেন।
এইভাবে খোয়াইয়ের হৃদয়ভূমে আরও একবার প্রতিধ্বনিত হলো সাহিত্যের বিজয়ধ্বনি। ‘আজকের ভাষা’ শারদ সংখ্যার উন্মোচন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি ছিল খোয়াইয়ের সাংস্কৃতিক আত্মার উৎসব।