কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে (Colonel Sofiya Qureshi) নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের মামলায় ফের সুপ্রিম কোর্টের রোষের মুখে পড়লেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ। তাঁর বিরুদ্ধে এবার তদন্তের নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। বিজয়ের ক্ষমাপ্রার্থনা মঞ্জুর না করে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কড়া মন্তব্য, “আপনি কুমিরের কান্না বন্ধ করুন। কর্নেল কুরেশিকে নিয়ে আপনার মন্তব্য লজ্জাজনক।”
সোমবার মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, “আপনার ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। আপনি একজন জনপ্রতিনিধি, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। আপনার মুখ থেকে এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়।” বিজয়ের বিরুদ্ধে ইন্দোরের থানায় যে এফআইআর দায়ের হয়েছে, তার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করারও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়েছে, সিটে ওই তিন সদস্যের মধ্যে একজন মহিলা আইপিএস আধিকারিককে অবশ্যই রাখতে হবে।
এরপরই বিচারপতি সূর্য কান্ত ভর্ৎসনার সুরে বলেন, “আপনার এই মন্তব্য কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়। আপনার আর ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। আমরা জানি আইন অনুযায়ী কীভাবে এর মোকাবেলা করতে হয়।” বিজয়ের এই মন্তব্যকে সুপ্রিম কোর্ট ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করে জানিয়েছে, একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে এধরনের মন্তব্য আশা করা যায় না।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাবে গত ৭ মে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। নির্ভুল ও নিখুঁত সেই হামলার পর সাংবাদিক বৈঠক করে গোটা দেশকে অপারেশন সিঁদুরের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। অপারেশ সিঁদুরের বিফ্রিংয়ে দুই মহিলা আধিকারিককে সামনে এনে দেশের নারীশক্তিকে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়েছিল গোটা বিশ্বকে। এই ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি কর্নেল কুরেশিকে নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য করতে দেখা যায় মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী বিজয় শাহকে।
বিজয় বলেন, “ওরা আমাদের হিন্দু ভাইদের পোশাক খুলে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদিজি ওদের (জঙ্গিদের) বোনকে ওদের বাড়িতে হামলার জন্য পাঠিয়েছেন। ওরা (জঙ্গিরা) আমাদের বোনকে বিধবা করেছে, তাই মোদিজি ওদের সম্প্রদায়ের বোনকেই ওদের পোশাক খুলে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।” কর্নেল কুরেশির নাম না নিলেও মন্তব্য যে তাঁকে উদ্দেশ্য করেই তা বুঝতে বাকি ছিল না কারও। তবে বিতর্ক তুঙ্গে উঠতেই বিজয় দাবি করেন, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি কর্নেল কুরেশির কাছে ১০ বার ক্ষমা চাইতেও প্রস্তুত।
কিন্তু এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েন বিজয়। মধ্যপ্রদেশ রাজ্য বিজেপির তরফেও রীতিমতো তিরস্কার করা হয় বিজয়কে। অবিলম্বে তাঁকে মন্ত্রীপদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।