শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ও প্রাক্ষোতিক শিক্ষার গুরুত্বকে বিবেচনা করে ত্রিপুরা সরকার কর্তৃক ২০২৩ সাল থেকে রাজ্যস্তরে প্রতিটি স্কুলে হয় সহর্ষ পাঠ্যক্রম। সহর্ষ- এর মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেগ সম্পর্কে সম্যক ধারনা সৃষ্টি করা ও সামাজিক ক্ষেত্রে তার সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা। সেই ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়েই রাজ্যব্যাপী সমস্ত সরকারী স্কুলে সফল্ভাবে প্রতিদিনের রুটিনে ক্লাসের শুরুতে সহর্ষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ত্রিপুরা সরকারের শিক্ষা দফতর।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক শিক্ষা শিক্ষার্থী জীবনে অনস্বীকার্যতাকে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ তে বিশেষভাবে চর্চার কেন্দ্রে আনা হয়। তারপর উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রথম রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরা সরকার এস সি ই আর টি’র সহযোগিতায় উদ্যোগ নেয় ‘সহর্ষ’ পাঠ্যক্রমের। যা সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক শিক্ষার রাজ্য-প্রদত্ত পোশাকি নাম। বর্তমানে পাঠ্যক্রমটিকে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য রাজ্য ব্যাপী বিদ্যালয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মনে রাখা দরকার, শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যক্রমটিকে আরও বেশী প্রসঙ্গায়িত করার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকেই ব্যাবহার করে অনুশীলনগুলি প্রস্তুত করা হয়েছে। উপরিপর ক্লাসগুলি পরিচালনের মাধ্যম হিসাবে আঞ্চলিক ভাষাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন শিক্ষকরা।
রাজ্যে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ পাঠ্যক্রমটির বিদ্যালয়-ভিত্তিক সফল বাস্তবায়নের জন্য এস সি ই আর টি’ ত্রিপুরা রাজ্যব্যাপী সহর্ষ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এস সি ই আর টি’ ত্রিপুরার পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজ্যের প্রতিটি স্কুল থেকে একজন শিক্ষককে সহর্ষ সম্পর্কিত ট্রেনিং-এর জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, যিনি হলেন সহর্ষ টিচার কোঅরডিনেটর এবং পরবর্তীতে যিনি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিজ স্কুলে অনান্য শিক্ষকদের ট্রেনিং পরিচালনা করবেন ও ক্লাসগুলি যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যাবস্থা করবেন। ইতিমধ্যেই জুলাই মাসে এস সি ই আর টি’ ত্রিপুরার এবং জেলা শিক্ষা আধিকারিকের ব্যাবস্থাপনায় ১৫০০ র অধিক সহর্ষ টিচার কোঅরডিনেটরকে প্রতিটি জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত দিক থেকেই ইতিবাচক প্রশিক্ষণটির প্রভাব স্কুলগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই সাফল্যকেই পাথেয় করে ও বর্তমান প্রজন্মকে সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়াকে অঙ্গীকার করে এস সি ই আর টি এবং জেলা শিক্ষা আধিকারিকের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি রাজ্য ব্যাপী আরও তিন দফায় যথাক্রমে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৩০০ র অধিক সহর্ষ টিচার কোঅরডিনেটরের প্রশিক্ষণের দেওয়া হয়েছে। প্রতি দফায় প্রতিটি জেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ১০০ জন শিক্ষক। বিভিন্ন ধাপে এমন ভাবেই রাজ্যের মোট ৫১৫৮ জন শিক্ষককে সহর্ষের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় ব্রতী হয়েছে এস সি ই আর টি ত্রিপুরা।
আগামীদিনে কেবলমাত্র পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সমাজে তাদের প্রকৃত মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হচ্ছে ত্রিপুরা সরকার। ফলে একদিকে তারা সমানভাবে গুরুত্ব দেবে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে তেমনই অন্যদিকে পরিচালিত করতে সক্ষম হবে আবেগকে। সর্বোপরি সহর্ষের ত্রিভুজাঙ্গিক লক্ষ্যের (আবেগের পরিচিতিকরন ও পরিচালন, শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি এবং সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন) সাথে সমানুপাতিকভাবে একাদেমিক শিক্ষা ও নিয়মিত স্কুলে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি করার সংকল্পে বদ্ধপরিকর ত্রিপুরা সরকার ও এস সি ই আর টি।