নিজস্ব সংবাদদাতা | গোপাল সিং | ত্রিপুরা
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা! মেনে নিতে পারলোনা প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া। ত্রিপুরা রাজ্যে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা সংক্রান্ত সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে তিপ্রামথা পার্টির বিধায়ক রণজিৎ দেববর্মা ‘হেডলাইনস ত্রিপুরা ন্যাশনাল’-এর সম্পাদক ও আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রণব সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়া ও মানহানিকর সংবাদ প্রচারের অভিযোগে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। অন্যদিকে, দিল্লিভিত্তিক প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে প্রণব সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে বিধায়ক দেববর্মার অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছে এবং সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ত্রিপুরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট গৌতম লাহিড়ির স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“ত্রিপুরার একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সদস্য প্রণব সরকারের বিরুদ্ধে হয়রানির ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ত্রিপুরা জার্নালিস্ট ইউনিয়নও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে, রাজ্যের একজন প্রাক্তন আত্মসমর্পণকারী মিলিট্যান্ট নেতা তথা বর্তমান বিধায়ক ইচ্ছাকৃতভাবে ওই সাংবাদিককে ভয় দেখিয়ে তাঁর সংবাদ প্রকাশ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। আমরা সমগ্র সাংবাদিক মহলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই এবং রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি, যেন প্রণব সরকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।”
এই বিবৃতির প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের সূচনা হয়েছে। কারণ, রণজিৎ দেববর্মা ২৪-রামচন্দ্রঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের একজন নির্বাচিত বিধায়ক এবং তিপ্রামথা পার্টির গুরুত্বপূর্ণ মুখ। অপরদিকে প্রণব সরকার ত্রিপুরার সংবাদ জগতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ সাংবাদিক এবং আগরতলা প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি। পাশাপাশি তিনি প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার একজন সদস্যও।
এইসব টানাপোড়েনের মাঝেই আজ, বিধায়ক রণজিৎ দেববর্মা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নিকটও একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে তাঁর বিরুদ্ধে “ভুয়া বাংলাদেশি নাগরিকত্বের অপপ্রচার” অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। দেববর্মা তাঁর চিঠিতে লিখেছেন— “আমি আজ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠি লিখছি। গোপনীয়তার কারণে নথিগুলি প্রকাশ করা হয়নি। ‘হেডলাইনস ত্রিপুরা ন্যাশনাল’-এর সম্পাদক প্রণব সরকার আমাকে একজন উপজাতি বিধায়ক হিসেবে টার্গেট করে মিথ্যা সংবাদ ও জাল নথি প্রচার করেছেন। আমি প্রধান বিচারপতির কাছে ন্যায্য তদন্ত এবং আইনের মাধ্যমে সুবিচার চেয়েছি।”
ইতিমধ্যে, বিধায়ক দেববর্মা এই ঘটনায় পশ্চিম আগরতলা থানায় ইতিমধ্যেই একটি এফআইআর দায়ের করেছেন, যেখানে তিনি প্রণব সরকার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভুয়া বাংলাদেশি ভোটার আইডি ও জন্ম সনদ প্রচারের অভিযোগ তুলেছেন।
ত্রিপুরার জনমনে প্রশ্ন জেগেছে—এই সংঘাতের পেছনে কি সত্যিই কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করছে, নাকি এটি রাজনীতির মঞ্চে নতুন এক ক্ষমতার লড়াই? সব চোখ এখন সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেস কাউন্সিলের দিকে—কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটাই স্থির করবে এই বিতর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ।


