বর্তমান রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে কোন ধরণের আপস করবে না। চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে খুব শীঘ্রই একটি সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং এজন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার ডাকা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ধলাই জেলার আমবাসা টাউন হলে আয়োজিত মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযান ৭.০ (MSSSKA 7.0) এর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযান (এমএসএসএসকেএ ৭.০) কোথায় আয়োজন করা হবে। তখন আমি বলেছি এই জাতীয় অনুষ্ঠান শুধু আগরতলায় নয়, অন্যান্য জায়গাতেও করা প্রয়োজন। তাই এবার আমরা ধলাই জেলার অধীনে আমবাসায় করার সিদ্ধান্ত নিই। ধলাই জেলা একটি এসপিরেশনাল জেলা। এই জেলা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং এখনও কিছু আছে। আমরা এসকল সমস্যা সমাধান করার জন্য কাজ করছি এবং রাজ্যের বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশ এসপিরেশনাল জেলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ০ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু, কিশোরদের মধ্যে ডাইরিয়া, কৃমি সমস্যা ও রক্তাল্পতা জনিত সমস্যা ওষুধ প্রদান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দূর করা।
ডাঃ সাহা বলেন, এবছর আমরা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ জনিত ব্যাধির সমাধান ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই কর্মসূচি আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। আমরা এটা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু করেছি। আমাদের অবশ্যই পরবর্তী প্রজন্মের যত্ন নিতে হবে। আমাদের অন্যতম লক্ষ্য স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান। কারণ মানুষের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে তারা কাজ করবেন কীভাবে? এর মধ্যে শুধু শারীরিক নয় মানসিক স্বাস্থ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই লক্ষ্যে ৩১ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত, একটি মপ-আপ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে বাড়ি বাড়ি ভিজিট, কমিউনিটি, অনাথ আশ্রম সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র কভার করা হবে। আমাদের লক্ষ্য সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছানো।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযান কর্মসূচির অগ্রগতি সম্পর্কে আপডেট প্রদান করেন। মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযান ১.০ তে ১০ লক্ষ সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছিল, যা প্রায় ৯৩% ছিল৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে এটি ছিল ৯৩.৫৬%, তৃতীয় পর্যায়ে ৯৬.৯৭%, চতুর্থ পর্যায়ে ৯৭%, পঞ্চম পর্যায়ে ৯৮.৯৬% এবং গত বছর এটি দাঁড়িয়েছিল ৯৭.৯৭%।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার এবং সেটা পূরণ হবে। আমরা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সাথে আপস করবো না। বিনিয়োগকারীরা চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসছেন। এছাড়া ইতিমধ্যেই রাজ্যে একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল খোলার জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। আর এখন ত্রিপুরাতেই ৯৭% চিকিৎসা সম্ভব। তাই মানুষের আর অপ্রয়োজনীয়ভাবে রাজ্যের বাইরে যেতে হবে না। আমরা আমাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক উন্নত করেছি। ডাবল ইঞ্জিন সরকার রাজ্যের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের মূল লক্ষ্য রাজ্যে একটি মেডিকেল হাব তৈরি করা, যাতে মানুষকে রাজ্যের বাইরে গিয়ে তাদের সঞ্চিত অর্থ খরচ করতে না হয়। এজিএমসিতে আরও নয়টি সুপার-স্পেশালিটি সুবিধা চালু করা হবে। ত্রিপুরায় প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে এবং উভয় রোগীই ভালো আছেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধলাই জিলা পরিষদের সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, বিধায়ক চিত্ত রঞ্জন দেববর্মা, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, ধলাই জেলার জেলাশাসক সাজু ওয়াহিদ এ, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা মিশন অধিকর্তা ড. সমিত রায় চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার অবিনাশ রাই সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।