কয়লা পাচার মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় দেরি নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল সিবিআই। মঙ্গলবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জানিয়ে দেন, বিচারে কোনও বিলম্ব চায় না আদালত। ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ৩ জুলাই মামলার চার্জ গঠন করার নির্দেশ দেন তিনি। এ দিনের শুনানিতে সব অভিযুক্তকে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হলেও, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দু’জন আসেননি। পরবর্তী শুনানিতে প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সেও তাঁদের হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বছর তিনেক সুপ্রিম কোর্টের ‘রক্ষাকবচে’ থাকার পরে, এই মামলার মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালা সম্প্রতি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। তার পরেই দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আইনজীবী সূত্রের দাবি। এখনও পর্যন্ত সিবিআই মামলায় যে দু’টি চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিনয় মিশ্র পলাতক। বাকি ৪২ জনের মধ্যে এ দিন শুনানিতে লালা-সহ ৪০ জন হাজির থাকলেও, জয়দেব মণ্ডল ও নারায়ণ খড়কা আসেননি। তাঁদের আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জানান, তাঁরা অসুস্থ। পরের শুনানিতে তাঁদের হাজির থাকতেই হবে বলে জানান বিচারক। বিনয় মিশ্র সম্পর্কে সর্বশেষ কী তথ্য রয়েছে— বিচারকের এই প্রশ্নে সিবিআই জানায়, তিনি এখনও পলাতক। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা দাবি করেন, সিবিআই-এর রিপোর্টের কপি তাঁদের দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা মামলার বিষয়ে কিছু বুঝতে পারছেন না। সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়, এত জনকে ২৫ হাজার পাতার ‘হার্ড কপি’ দেওয়া সম্ভব নয়। বিচারক প্রত্যেক অভিযুক্তকে এ দিনই ‘সফ্ট কপি’ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বিচারক জানতে চান, মামলার তদন্ত আর কত দূর? সিবিআই-এর তরফে জানানো হয়, এক জন সরকারি পদাধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ১৬ এপ্রিল তার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এখনও তা মেলেনি। বিচারক তখনই প্রশ্ন করেন, সাড়ে তিন বছর ধরে যে মামলা চলছে, সেখানে এত দেরিতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয়েছে কেন? কবে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে, আর কোনও চার্জশিট সিবিআই জমা দেবে কি না— এ সবও জানতে চান। সিবিআই জানায়, আর একটি চার্জশিট জমা দেওয়া হতে পারে। এর পরেই বিচারক জানান, আর কোনও চার্জশিট জমা পড়ুক বা না পড়ুক, এই মামলার দ্রুত চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন। আগামী ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। ৩ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিনই চার্জ গঠন করতে হবে। অনেক বয়স্ক অভিযুক্ত রয়েছেন। তাঁদের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। তাই দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে বলে জানান বিচারক।